নিশীথ সূর্যের দেশে রোজা
Sat, Aug 18th, 2012 5:54 pm BdST
ঢাকা, অগাস্ট ১৮ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম) - বিশ্ব জুড়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা রমজান মাসে রোজা রাখেন সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। কিন্তু যেসব দেশে সূর্য পশ্চিম আকাশে ডুবতেই চায় না, সেসব দেশে মুসলমানরা বেশ বেকায়দাতেই পড়েন।
ফিনল্যান্ডের রোভানিয়েমি শহরের মুসলমানরা রোজা রাখতে গিয়ে এ ধরনের বিড়ম্বনাতেই পড়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি ম্যাগাজিন। ফিনল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলের শহর রোভানিয়েমি পড়েছে ৬৬ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ বা ঠিক আর্টিক সার্কেলে। শীতকালে প্রায় সারা দিনই অন্ধকারে ডুবে থাকে শহরটি। কিন্তু গ্রীষ্মকালে সূর্য যেন ডুবতেই চায় না।
দিগন্তে ঝুলে থাকা সূর্য সমস্যাই বয়ে আনে শাহ জালাল মিয়া মাসুদের মতো রোজাদার মুসলমানদের জন্য। পাঁচ বছর আগে তথ্য প্রযুক্তিতে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন তিনি। ২৮ বছর বয়সী মাসুদকে রোজা রাখতে খাদ্য বা পানি না খেয়ে কাটাতে হয় প্রায় ২১ ঘণ্টা।
তবুও তার মুখে হাসি, “অন্ধকার হতেই চায় না। সূর্য সব সময় দিগন্ত রেখায় ঝুলে থাকে।”
রোভানিয়েমিতে রাত ১১টার দিকে সূর্য দিগন্ত রেখার নিচে নামে। আকাশ তখন হয়ে ওঠে অসাধারণ সুন্দর নীল। অন্ধকার এর চেয়ে বেশি আর নামে না। পাঁচ ঘণ্টা পরেই আবার সূর্য উকি দেয়।
মাসুদ জানান, ফিনিস সময় মেনে রোজা রাখাটা সত্যিই কঠিন। কিন্তু ক্ষুধা ও ক্লান্তি সয়ে তিনি রোজা রাখেন।
তবে একটু কম সময় ধরেও রোজা রাখার ব্যবস্থা আছে। স্থানীয় ইমাম ও ইসলামিক সোসাইটি অব নর্দান ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট ড. আবদুল মান্নান জানান, ফিনল্যান্ডের মতো দেশে রোজা রাখার দুটো তরিকা আছে।
“মিশরীয় পণ্ডিতরা বলেন, যদি দিনের দৈর্ঘ্য ১৮ ঘণ্টার বেশি হয়, তাহলে মক্কা বা মদিনার সময় মেনে অথবা সবচেয়ে কাছের মুসলমান দেশের সময় মেনে রোজা রাখা যাবে।
“সৌদি ইসলামি চিন্তাবিদেরা মনে করেন, দিন বড়ই হোক বা ছোটই হোক আপনাকে স্থানীয় সময়ই মেনে চলতে হবে”, অন্য পদ্ধতির কথা জানান মান্নান।
ড. মান্নান জানান, উত্তর ফিনল্যান্ডের মুসলমানেরা মক্কার সময় বা সবচেয়ে কাছের মুসলমান দেশে তুরস্কের সময় মেনে রোজা রাখে।
ল্যাপল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক নাফিসা ইয়াসমিন বাংলাদেশের ঢাকা থেকে তার স্বামী আর দুই সন্তানকে নিয়ে ফিনল্যান্ড এসেছেন ছয় বছর আগে। রান্নাঘরে ইফতারের বিভিন্ন খাবার তৈরি করতে করতে তিনি জানান, রোভানিয়েমিতে প্রথমে ফিনিস সময় অনুযায়ী রোজা রাখতে গিয়ে তাকে দিনে ২০ ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে হয়েছিল।
“এটা অনুসরণ করা খুবই কঠিন কারণ বাংলাদেশে আমরা ১২ ঘণ্টা রোজা রাখতাম। এরপর আমি ঠিক করলাম, ফিনিস সময়ে আর নয়, আমাকে মক্কার সময় মেনেই রোজা রাখতে হবে। কিন্তু আল্লাহ এটা গ্রহণ করবে কিনা তা নিয়ে আমি কিছুটা চিন্তিত।”
সোমালিয়া, ইরাক ও আফগানিস্তান থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ফিনল্যান্ডে আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে অনেক মুসলমান আসে। ২০০১ সাল থেকে ফিনল্যান্ড প্রতিবছর ৭৫০ জনকে আশ্রয় দেয়। নতুন যারা আসেন, তাদের সরকারের পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় রোভেনিয়েমির মতো শহরগুলোয় পাঠানো হয়।
রোভেনিয়েমির মুসলমানদের জন্য দীর্ঘ দিনই কেবল সমস্যা নয়। এখানকার ৬০ হাজার দোকানের কোনোটিতেই ‘হালাল খাদ্য’ বিক্রি হয় না। তাই বাজার করতে ইয়াসমিন যান ৩০০ কিলোমিটার দূরের শহর ওউলুতে। গাড়িতে আসতে যেতে তার সময় লাগে ৬ ঘণ্টা। তাই একেকবারে অনেক বাজার করে নিয়ে আসেন তিনি যার মধ্যে থাকে খেজুর, ছোলা ও হালাল মাংস।
তবে ইয়াসমিন আর মাসুদ উভয়ই আর্টিক সার্কেলে জীবনযাপন উপভোগ করছেন। আর তাদের ধর্মের প্রতি সাধারণ মানুষ শ্রদ্ধাশীল বলেও তারা জানান।
তবে ঈদের সময় আত্মীয়, বন্ধুবান্ধব ছেড়ে দেশ থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে থাকতে একটু খারাপই লাগে তাদের।
মুরাদ বলেন, “উৎসবের দিন এখানে অন্যান্য দিনের মতোই। ঈদের কোনো অনুভূতিই পাওয়া যায় না। আমার মনে হয় আমি অনেককিছু হারাচ্ছি।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডককম/এসইউ/১৭১০ ঘ.
No comments:
Post a Comment